পরকীয়া প্রেম
কোনদিন প্রেমে পড়েননি এমন মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। প্রেম হলো একটি অত্যন্ত সুন্দর ও গভীর সম্পর্ক, যা দুই মানুষের মধ্যে একটি আদরের ও সমর্থনের ভাবনা থেকে উৎপত্তি হয়। এটি প্রেমিকের মধ্যে আপনবদ্ধতা, আদর, সহানুভূতি, সম্মতি, আত্মীয়তা এবং পরস্পরের সমর্থনের ভাবনা সহ নানা উৎসাহের অনুভূতি সৃষ্টি করে। প্রেমের অন্তর্গত আত্মশক্তি, সম্মান, সম্মতি এবং অবস্থা মানের অন্যত্র সৃষ্টি করে এবং এটি একজন মানুষের জীবনে অভাবনীয় পরিবর্তন আনতে পারে। প্রেম মানব সমাজের মধ্যে একটি অপার বাঁধা, যা সাহস, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ভালবাসার ভাবনার সাথে জড়িত। তবে সবধরনের প্রেম একরকম হলেও এক ধরনের প্রেম একটু আলাদা, যার নাম পরকীয়া প্রেম।
পরকীয়া প্রেম | Photo by Feriwala Studio |
পরকীয়া প্রেম হলো বিবাহিত বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কের বাইরে অন্য কারো সঙ্গে প্রেম বা শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো। এক কথায় বলা যায় পরকীয়া প্রেম হলো একটি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। এটি সাধারণত গোপনে ঘটে থাকে এবং সামাজিক বা ধর্মীয় নিয়মের বিপরীতে চলে। পরকীয়া প্রেমের কারণে সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা, মানসিক চাপ, এবং পারিবারিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সমাজে এটি একটি বিতর্কিত বিষয়, কারণ এটি নৈতিকতা এবং বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেকের মতে, এটি সম্পর্কের মধ্যে আবেগের ঘাটতি, অপরিসীম আকাঙ্ক্ষা বা অতৃপ্তি থেকে জন্ম নেয়। অনেকদিন ধরেই পরকীয়া প্রেমের উপর প্রবন্ধ লেখার চিন্তা করেছি। আজ এই ব্লগে পরকীয়া প্রেম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
পরকীয়া প্রেমের মূল্যায়ন
পরকীয়া প্রেম এক অনৈতিক সম্পর্ক। পরকীয়া হলো খুবই সুস্বাদু বিষাক্ত ও নিষিদ্ধ একটা ফল। যা বিতৃষ্ণ, অতৃপ্ত মানুষের তৃষ্ণা ও তৃপ্তি মেটায় আবার জীবন ধংসের কারন হিসেবেও দেখা দেয়। যতো ধরনের প্রেম আছে তারমধ্যে পরকীয়া প্রেমকে প্রচন্ড শক্তিশালী প্রেম বলে মনে করা হয়। প্রতিটা প্রেমে স্বার্থটা অতি সূক্ষ্মভাবে বিদ্যমান থাকে। আপাতদৃষ্টিতে নিঃস্বার্থ মনে হলেও আসলে স্বার্থ ছাড়া কোন প্রেম হয়না। আর পরকীয়া প্রেম গড়েই উঠে শতভাগ স্বার্থের উপর ভিত্তি করে। পরকীয়া প্রেমে শারিরীক সম্পর্কই হলো মূল উদ্দেশ্য। তাই এই প্রেম যে নৈতিকতা বিরোধী সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। পরকীয়া সম্পর্কের সমস্যা হলো এর আকর্ষণ ক্ষমতা, যে ক্ষমতার কারেনে মানুষ এর নেগেটিভ বা এর ক্ষতিকর দিক জেনেও এই সম্পর্কের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এই আকর্ষণের কারনেই মানুষ অবচেতনভাবেই পরকীয়া প্রেমের কাহিনী, পরকীয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন নাটক, গল্প, উপন্যাস ও চলচ্চিত্র ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট হয়।
পরকীয়া প্রেমের লক্ষণ
সঙ্গীর আচরণে পরকীয়ার লক্ষণগুলো শতভাগ প্রকাশ নাও হতে পারে আবার প্রকাশ পেলেও সেগুলো যে পরকীয়া সেটাও সঠিক নাও হতে পারে তবে লক্ষণগুলি প্রকাশ পেলে যাচাই-বাছাই করলে বুঝতে পারা যাবে যে এটা পরকীয়া কিনা। যারা পরকীয়ায় জড়ায় তাদের মধ্যে কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হয়, যেমনঃ আপনি যদি বিনা কারনে সঙ্গী কর্তৃক অবহেলার শিকার হন; সঙ্গী যদি কোন কারন ছাড়াই পরিবারে সময় কমিয়ে দেয়; আপনার সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে চায় ও কথা কম বলতে চায়; সঙ্গী সবার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে একাকীত্বে থাকতে চায়; আপনার সাথে ঘুরতে যাওয়া বা একসাথে অন্য কোন কাজে আগ্রহ প্রকাশ না করে কোন অজুহাত দেখায়; অযৌক্তিক রাগ করা এবং তুচ্ছ কারনে আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করা; ফোন, ইন্টারনেট, স্যোসাল মিডিয়াতে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় করা; হঠাৎ নিজের ফিটনেস ও সেীন্দয্যের প্রতি অতিরিক্ত সচেতন হওয়া; এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ব্যাপারে উদাসিন থাকা এবং অভ্যাসগত বা শুধূ আপনাকে খুশি করতে যাতে সঙ্গীর প্রতি সন্দেহের সৃষ্টি না হয় সেই কারনে যৌন সম্পর্ক করছেন কিনা- এগুলোই হলো সঙ্গী পরকীয়া প্রেমে জড়িয়েছে কিনা তার লক্ষণ।
পরকীয়া প্রেমের কারণ
পরকীয়া প্রেমের কারণগুলি বিভিন্ন হতে পারে এবং এগুলি ব্যক্তির মানসিক অবস্থা, সম্পর্কের গতিশীলতা, এবং সামাজিক প্রভাবের উপর নির্ভর করে। নিচে কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলোঃ
সম্পর্কে আবেগের ঘাটতিঃ দীর্ঘদিনের সম্পর্কের মধ্যে অনেক সময় উত্তেজনা বা রোমান্সের অভাব দেখা দেয়, যা একজনকে নতুন কিছু খুঁজতে উৎসাহিত করতে পারে।
অনুভূতির অবহেলাঃ একজন সঙ্গী যদি নিজেকে অবহেলিত বা অবমূল্যায়িত মনে করে, তবে সে অন্য কারো কাছে সেই ভালোবাসা বা স্বীকৃতি খোঁজার চেষ্টা করতে পারে।
শারীরিক আকর্ষণঃ শারীরিক আকর্ষণও পরকীয়া প্রেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে। কেউ হয়তো শারীরিক আকর্ষণের কারণে নতুন কারো প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে।
বিরক্তি বা একঘেয়েমিঃ দীর্ঘদিনের সম্পর্কে একঘেয়েমি আসতে পারে, যা থেকে মুক্তি পেতে কেউ নতুন কিছু খোঁজার চেষ্টা করে।
প্রতিশোধ বা অসন্তোষঃ কখনো কখনো সঙ্গীর বিরুদ্ধে রাগ বা অসন্তোষের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কেউ পরকীয়া প্রেমে জড়াতে পারে, বিশেষ করে যদি সঙ্গী আগে থেকেই কোনো ভুল করে থাকে।
মানসিক বা সামাজিক চাপঃ অনেক সময় মানসিক চাপ বা সামাজিক প্রভাবের কারণে মানুষ অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্ক করতে পারে, যেমন কাজের চাপ, বন্ধুবান্ধবের প্রভাব ইত্যাদি।
বৈবাহিক জীবনে সমস্যার সমাধানে অক্ষমতাঃ কিছু মানুষ তাদের সম্পর্কের সমস্যাগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হয়ে নতুন সম্পর্কের মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পেতে চায়।
আত্মবিশ্বাসের অভাবঃ আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণে কেউ অন্য কারো কাছে আত্মপ্রত্যয় বা সমর্থন খুঁজতে পারে, যা পরকীয়ার দিকে ধাবিত করে।
সাংস্কৃতিক বা সামাজিক প্রভাবঃ কিছু সমাজ বা সংস্কৃতিতে পরকীয়া সম্পর্কের প্রতি কিছুটা শিথিলতা থাকে, যা মানুষকে এর প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে।
এই কারণগুলো হলো পরকীয়ার সাধারণ কারন। পরকীয়া সম্পর্কের মনস্তাত্বিক কারনগুলো অতিগুরুত্বপূর্ণ। পরকীয়া সম্পর্কের মনস্তাত্ত্বিক কারন নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
পরকীয়া কেন হয়? পরকীয়ার সাইকোলজিক্যাল বিশ্লেষণ
পরকীয়া প্রেম বিশ্লেষণ করলে দুটি মানুষের মানসিক ও শারিরীক মিলন এবং এক বা একাধিক বিচ্ছেদ বা ভগ্নপ্রায় সম্পর্কের ঘটনা পাওয়া যায়। যারা শারিরীক ও মানসিক ভাবে আনস্যাটিসফাইড তারাই পরকীয়ায় জড়ায়। এক কথায় বলতে গেলে দুজন আনস্যাটিসফাইড মানুষের যে সম্পর্কের মাধ্যমে মিলন ঘটে সেটাই পরকীয়া। একটি চলমান প্রেম বা বৈবাহিক সম্পর্কে বিভিন্ন কারনেই দুজনের মাঝে দূরত্ব, শূণ্যতা, অশান্তি সৃষ্টি হয়। বর্তমান সঙ্গীর কাছে মানসিক বা দৈহিক সুখ থেকে বঞ্চিত হলে মানব মন এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনা তাই মন চাহিদা মেটানোর জন্য বিকল্প মানুষ খুঁজে। সে সময় মনের মতো বিকল্প কাউকে খু্ঁজে পেলে তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি এবং একটি ভালোবাসার জটিলতা যুক্ত একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সম্পর্কের নামই পরকীয়া। সাধারনত একটি বৈবাহিক সম্পর্ক থাকা অবস্থায় অন্যকোন বিবাহিত বা অবিবাহিত কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক বলে মনে করা হয়। আবার অবিবাহিত প্রেমিক জুটির মধ্যে তৃতীয় পক্ষের আগমনও একধরনের পরকীয়া।
বিস্তারিত জানতে